জয়েন্ট (গিরা) ব্যথা, ফোলা ও শক্ত হয়ে যাওয়া: কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার ।

joint

জয়েন্ট (গিরা) ব্যথা, ফোলা ও শক্ত হয়ে যাওয়া: কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার

জয়েন্ট বা গিরার ব্যথা, ফোলা এবং শক্ত হয়ে যাওয়ার সমস্যাটি আজকাল খুব সাধারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি যে কোনো বয়সের মানুষের মধ্যেই দেখা যেতে পারে, তবে বয়স্কদের ক্ষেত্রে এটি বেশি লক্ষ্য করা যায়। এই সমস্যার পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে, যেমন আর্থ্রাইটিস, গাউট, ইনফেকশন, অতিরিক্ত ওজন, বা অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম। চলুন, জয়েন্ট ব্যথার কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত জানি।

জয়েন্ট ব্যথার কারণসমূহ:

১. অস্টিওআর্থ্রাইটিস – এটি জয়েন্টের কার্টিলেজ ক্ষয়ে যাওয়ার কারণে ঘটে এবং সাধারণত বয়স বৃদ্ধির সাথে বাড়ে। ২. রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস – এটি একটি অটোইমিউন ডিজিজ, যেখানে দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিজেই জয়েন্টের টিস্যুগুলোর ওপর আক্রমণ করে। ৩. গাউট – রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বেড়ে গেলে জয়েন্টে ক্যালসিয়াম ক্রিস্টাল জমে গিয়ে তীব্র ব্যথার সৃষ্টি করে। 4. ইনফেকশন (সেপ্টিক আর্থ্রাইটিস) – জয়েন্টে ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের সংক্রমণ হলে এটি ফুলে যেতে পারে। 5. আঘাত ও অতিরিক্ত চাপ – কোনো আঘাত বা অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রমের ফলে জয়েন্টের ব্যথা হতে পারে। 6. অতিরিক্ত ওজন – শরীরের ওজন বেশি হলে জয়েন্টের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে, বিশেষ করে হাঁটু ও কোমরের জয়েন্টে।

জয়েন্ট ব্যথার সাধারণ লক্ষণসমূহ:

✔ জয়েন্টের ব্যথা যা দিনে বা রাতে বেশি হতে পারে। ✔ জয়েন্ট ফুলে যাওয়া ও লাল হয়ে যাওয়া। ✔ গতি সীমিত হয়ে যাওয়া ও নড়াচড়া করতে কষ্ট হওয়া। ✔ সকালের দিকে জয়েন্ট শক্ত হয়ে যাওয়া। ✔ জয়েন্টের চারপাশে উষ্ণ অনুভূতি।

জয়েন্ট ব্যথার প্রতিকার ও ব্যবস্থাপনা:

১. জীবনধারা পরিবর্তন:

✔ অতিরিক্ত ওজন থাকলে তা কমানোর চেষ্টা করুন। ✔ সঠিক ভঙ্গিমায় চলাফেরা ও বসার অভ্যাস গড়ে তুলুন। ✔ অতিরিক্ত ভারী কাজ বা একটানা অনেকক্ষণ বসে থাকা এড়িয়ে চলুন।

২. ব্যায়াম ও ফিজিওথেরাপি:

✔ হালকা যোগব্যায়াম ও স্ট্রেচিং জয়েন্টের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। ✔ ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে জয়েন্টের নড়াচড়া স্বাভাবিক রাখা সম্ভব। ✔ হাঁটাহাঁটি ও সাঁতার কাটা জয়েন্টের জন্য উপকারী হতে পারে।

৩. খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন:

✔ অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি খাবার যেমন হলুদ, আদা, ওমেগা-৩ যুক্ত মাছ খাওয়া উচিত। ✔ চিনি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার কমিয়ে স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করুন। ✔ পর্যাপ্ত পানি পান করুন ও ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন-ডি যুক্ত খাবার খান।

৪. ওষুধ ও চিকিৎসা:

✔ প্রয়োজন হলে ব্যথানাশক ওষুধ বা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ করুন। ✔ ইনজেকশন থেরাপি, জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট সার্জারি ইত্যাদি কিছু ক্ষেত্রে প্রয়োজন হতে পারে। ✔ প্রয়োজনে অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

শেষ কথা

জয়েন্ট ব্যথা ও শক্ত হয়ে যাওয়ার সমস্যা উপেক্ষা করা উচিত নয়। প্রাথমিক পর্যায়ে সচেতন হলে ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে এটি সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। স্বাস্থ্যকর জীবনধারা, সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত ব্যায়াম জয়েন্টের সুস্থতা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যদি জয়েন্ট ব্যথা দীর্ঘমেয়াদি হয় বা ব্যথার মাত্রা বাড়তে থাকে, তবে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top