বোন ডেনসিটি (bone density) পরীক্ষা করিয়ে কোনো লাভ নেই।

Bone Density

 

বয়োবৃদ্ধদের জন্য বোন ডেনসিটি (bone density) পরীক্ষা করিয়ে কোনো লাভ নেই। কারণ তাদের অস্টিওপোরোসিস (osteoporosis) থাকবেই, আর বয়স যত বাড়বে, এর মাত্রাও বাড়তে থাকবে, সেই সাথে বাড়বে হাড় ভাঙ্গার ঝুঁকি।

শতবর্ষী যত লোক পড়ে গিয়ে ব্যাথা পায় তাদের প্রায় সবাই তিন মাসের মধ্যে মারা যায়। পড়ে গিয়ে সবসময় হাড় না ভাঙ্গলেও পতনের দৈহিক ও মানসিক ঝাঁকুনি শরীর-মনকে ভীষণ পর্যুদস্ত করে দেয় যার ধকল সামলাতে না পেরে রোগী মৃত্যুর দিকে ধাবিত হয়।

যাদের বয়স ষাট পেরিয়ে গেছে তাদের হাড় ভাঙ্গা ঠেকানোর সবচেয়ে বড় উপায় হলো পড়ে গিয়ে ব্যাথা পাওয়া রোধ করা।
কীভাবে করবেন?

আমি এই গোপন রহস্যটিকে চারটি শব্দে ব্যক্ত করি: “সাবধান, সাবধান, সবসময় সাবধান”!

তাহলে একটু ভেঙ্গে বলি:
১) কোনো কিছু ধরা বা পাড়ার জন্য কখ্খনো চেয়ার বা টুলজাতীয় কিছুর ওপর উঠে দাঁড়াবেন না।

২) বৃষ্টির দিনে বাইরে হাঁটতে যাবেন না।

৩) এই বয়সে কোমড়ের হাড় ভাঙ্গার এক নম্বর কারণ হলো বাথরুমে পা পিছলে পড়ে যাওয়া। তাই গোসল করার সময় বা বাথরুম ব্যবহারের সময় অতরিক্তি সতর্ক থাকুন।

 বিশেষ করে নারীরা, বাথরুমে দাঁড়িয়ে কাপড় বদলাবেন না। গোসল শেষে তোয়ালে বা শাড়ি পেঁচিয়ে বেরিয়ে আসুন এবং ধীরে সুস্থে চেয়ারে বা বিছানায় বসে কাপড় পরুন।
 বাথরুমে ঢোকার আগে ভালো করে দেখুন মেঝে ভেজা কিনা। ভেজা মেঝেতে হাঁটবেন না।
 কেবল কমোড ব্যবহারের চেষ্টা করুন। হাঁটু ভাঁজ করে বসলে উঠতে অনেক বেগ পেতে হতে পারে এবং পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
 সম্ভব হলে কমোড থেকে উঠার সময় হাতে টান দিয়ে ধরার মতো কোনো হাতল দেওয়ালে লাগিয়ে নিন।
 গোসল করার সময়ও বসার জন্য টুল ব্যবহার করুন। চোখ বন্ধ করে মাথায় পানি দিবেন না।

৪) রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে দেখে নিন ঘরের মেঝেতে কিছু পড়ে আছে কিনা যাতে পা লেগে হোঁচট খেতে পারেন। মেঝে যেনো অবশ্যই ভেজা না থাকে সে ব্যাপারে অতিরিক্ত সকর্ক থাকুন।

৫) রাতে ঘুম ভাঙ্গলে বিছানা ছাড়ার সময় আগে ২-৩ মিনিট বিছানার পাশে বসুন, বাতি জ্বালান, তারপর উঠে দাঁড়ান।

৬) অন্তত রাতের বেলায় (এবং সম্ভব হলে দিনেও) বাথরুমের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করবেন না। সম্ভব হলে বাথরুমের ভেতরে একটি এলার্ম লাগিয়ে নিন যাতে করে জরুরি মুহূর্তে বেল বাজিয়ে কারো সাহায্য চাইতে পারেন।

৭) কখনো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাপড় বদলাবেন না। চেয়ারে বা বিছানায় বসে নিন।

৮) সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় রেলিংয়ে একটা হাত রাখুন। দুই হাত পকেটে ঢুকিয়ে কখনো সিঁড়িতে পা রাখবেন না।

৯) যদি কখনো পড়েই যেতে থাকেন, চেষ্টা করুন হাত প্রসারিত করে মাটি বা মেঝে ধরে ফেলতে – তাতে হাত ভেঙ্গে গেলেও সেটা কোমড় ভাঙ্গার চেয়ে অনেক বেশি ভালো।

১০) সারাদিন শুয়ে বসে থাকবেন না। অন্তত কয়েক মিনিট করে হাঁটুন – যতটা সম্ভব।

১১) বিশেষ করে মহিলারা, ওজন কম রাখার ব্যাপারে অতিরিক্ত যত্নবান হোন। পরিমিত খাবার খাওয়া সবচে গুরুত্বপূর্ণ। বেঁচে যাওয়া খাবার নষ্ট না করে খেয়ে ফেলার প্রবণতা কাজ করে অনেকের মাঝে। ভুলেও এটি করবেন না। কখনো ভরপেট খাবেন না – যত মজার আর যত ভালো খাবারই হোক, সবসময় পেট ভরার আগে খাওয়া শেষ করবেন।

১২) সম্ভব হলে বাইরে রোদে কোনো কাজ করুন কিছুক্ষণ। তাতে ভিটামিন ডি-র প্রভাবে হাড় কিছুটা শক্ত হবে।

একবার পড়ে গিয়ে বড় ধরনের ব্যাথা পেলে গড়ে দশ বছর আয়ু কমে যায়। বৃদ্ধ বয়সে কোনো অপারেশন ভালো কাজে আসে না, আর ওষুধ খেয়ে বিছানায় শুয়ে শুয়ে চিকিৎসা মানে কেবল মৃত্যুর দিন গোনা। তাই সাবধান থাকার কোনো বিকল্প নেই।

লেখাটা অনেক লম্বা হলেও আপনার বয়স যদি ষাট পেরিয়ে গিয়ে থাকে তাহলে আশা করি মন দিয়ে পড়ে মনে রাখবেন। যারা বয়োবৃদ্ধদের সেবা করছেন তারাও বিষয়গুলো মাথায় রাখবেন।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top